মাসে মাত্র ১০০ টাকা সঞ্চয়ী জমা। সেই জমা কয়েক দশকে বৃদ্ধি পেয়ে কয়েকশকোটি টাকার সম্পদে পরিনত হয়েছে। বলছিলাম দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেডের কথা।
খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের আবাসন সমস্যার সমাধানে চিন্তা নিয়ে মি. ডানিয়েল কোড়াইয়া ও মি. আলেকজান্ডার রোজারিওসহ ২৭জন ১৯৭৭ সালের ১৪ এপ্রিল এই সোসাইটি গড়ে তোলে। ১৯৭৮ সালের ৬ জুন সমবায় অধিদপ্তর থেকে এটির নিবন্ধন দেয়া হয়। আর এই পুরো প্রক্রিয়ার পেছনে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেন আর্চবিশপ মাইকেল রোজারিও। মাত্র ২৭ জনের সোসাইটি আজ কয়েক হাজার সদস্যের একটি পরিবারে রূপ নিয়েছে।
যদিও প্রতিষ্ঠার তিন দশক অর্থাৎ ১৯৭৭ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত খুব বেশি অগ্রগতি ছিলো না। এই ৩৫ বছরে সদস্যদের সম্পদের পরিমান দাড়ায় ২২২ কোটি টাকা। পরবর্তী এক যুগে ২০২৪ সালে বর্তমান কমিটির তত্ত্বাবধানে তা ৩ হাজার দুইশ’ ৭৮ কোটি টাকা বেড়ে দাড়িয়েছে ৩৫শ’কোটি টাকায়।
প্রথম ৩৫ বছরে জমির পরিমান ছিল ২৭৭ বিঘা। পরবর্তী মাত্র এক যুগে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তা বেড়ে দাড়িয়েছে এক হাজার বিঘায়। যেখানে ৭৭টি প্লট প্রকল্পে চার হাজার ৪৯০টি প্লট গড়ে তোলা হয়েছে, যার মধ্যে ২ হাজার ১১৭টি প্লট ইতোমধ্যে বরাদ্দও দেয়া হয়েছে।
এই সমিতির রয়েছে ২০৩টি ফ্ল্যাট প্রকল্পও। অথচ মাত্র এক দশক আগেও ২০১২ সালে ছিলো মাত্র ১২টি ফ্ল্যাট প্রকল্প। বর্তমানে এসব প্রকল্পের ১ হাজার ৫৯৬টি ফ্ল্যাটে খ্রিষ্টান স¤প্রদায়সহ অন্যান্য ধর্মের মানুষ বসবাসের সুযোগ পাচ্ছেন। ফ্ল্যাট প্রকল্পে ৪০টি ভবন ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে, যেখানে ৪২৬টি পরিবার বসবাস করছে এবং আরও ১৯টি ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে।
সোসাইটির চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন এবং তাঁর পরিষদকে এজন্য ২০১৯ সালে জাতীয় শ্রেষ্ঠ সমবায় স্বর্ণপদক অর্জন করেন।
এই সোসাইটির উন্নয়ন কর্মকান্ড কেবল আবাসনেই সীমাবদ্ধ নয়। সামাজিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রেও তারা নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ঢাকার মনিপুরীপাড়ায় ছয়তলা বিশিষ্ট প্রধান কার্যালয়টি প্রয়াত আর্চবিশপ মাইকেল রোজারিও’র নামে উৎসর্গ করা হয়েছে। বিভিন্ন ধর্মপল্লীতে গির্জা নির্মাণ বা মেরামত, কবরস্থান নির্মাণ এবং দেশের বিভিন্ন ধর্মপ্রদেশে মান্ডলিক অনুষ্ঠানে সহায়তা করছে তারা। বিশেষ করেু বিশপীয় অধিষ্ঠান, যাজকীয় অভিষেক, ব্রতধারী-ব্রতধারিণীদের জয়ন্তী উৎসব, বিশপীয় ভবন, স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাউজিং সোসাইটি বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
বর্তমান পরিষদের উদ্যোগে আয়মূলক প্রকল্পও বাস্তবায়িত হয়েছে, যার মধ্যে গাজীপুরে পুবাইলের ডেমরপাড়ায় প্রায় চল্লিশ বিঘার জমির ওপর রিসোর্ট কাম ট্রেনিং সেন্টার। গাজীপুরের কালীগঞ্জে ১৩১ শতাংশ জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে প্রবীণ নিবাস ও গেস্ট হাউজ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানটি। যেখানে ১১১জন প্রবীণ থাকার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। গাজীপুরের কালীগঞ্জের দড়িপাড়া এলাকায় প্রায় ১০৫০ শতাংশ জমিতে তৈরী করা হচ্ছে থিম পার্ক। এছাড়াও সোসাইটির উদ্যোগে সাভারের রাজাসন পলুর মার্কেটে ১০০ বেডের সেন্ট ফিলোমিনা মা-শিশু এন্ড জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রাজধানীর ফার্মগেইট পশ্চিম তেজতুরীবাজার এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে একটি ছাত্রীবাস।
এছাড়াও এই সোসাইটি থেকে সদস্যদের জন্য প্রয়োজনীয় মুহূর্তে ঋণ গ্রহণের সুবিধা রাখা হয়েছে। রয়েছে দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদী আমানত, শটটার্ম এইচডিপিএস, এইচডিপিএস স্কীম ও মিলিয়নিয়ার স্কীম।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সময়ের পালাক্রমে বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন ও তার পরিষদ দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তখন সোসাইটি ছিল নানা জটিল সমস্যায় জর্জরিত। একদিকে সোসাইটির তহবিল ছিল শূণ্যের কোঠায় অপরদিকে নানা অনিয়ম ও সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটে হাউজিং সোসাইটি পরিণত হয়েছিল একটি নিমজ্জিত উদ্যোগ। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের এক দশকে ঘুরে দাড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
সোসাইটির কার্যক্রম সম্পর্কে চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন বলেন, সমিতির কার্যক্রম ঋণ দেওয়া-নেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে এতো সম্পদ গড়া সম্ভব হতো না। সদস্যদের অর্থ বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগের কারনেই আজ তা উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে। তিনি আরো জানান, গাজীপুরের বিন্দানে অটো-ব্রিকস, গাজীপুরের ভাদুনে মিনারেল ওয়াটার পানির প্লান্ট, নীড় মডেল ফিলিং স্টেশন, নীড় কনভেনসন হল নামে আরো কয়েকটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে যে, হাউজিং সোসাইটির উন্নয়ন দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিটাকে আঁকড়ে ধরে মুষ্টিমেয় লোকজন বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়াচ্ছেন যা হাউজিং সোসাইটির সুনাম ক্ষুন্ন করছে। আরও জানা গেছে একই লোকজন নানারকম মিথ্যা রটিয়ে উস্কানিও দিচ্ছেন। তবে এসব অপপ্রচার বন্ধে সচেতন সদস্যগণ সোসাইটির ব্যবস্থাপনা কমিটিকে আইনী ব্যবস্থা নিতে বলছেন কেউ কেউ।