
দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-আপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি:-এর ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও সদ্য বিদায়ী কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন অনুষ্ঠান ১৩ এপ্রিল, সন্ধ্যায় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৪ এপ্রিল ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ২৭ জন সদস্য তাদের স্বপ্ন নিয়ে পথচলায় শুভসূচনা করে এই হাউজিং সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আজ ৪৮ বছরের পথপরিক্রমায় তা ২৭ হাজার সদস্যের একটি সুবৃহৎ প্রতিষ্ঠান হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে। বিভিন্ন সময়ে ঘাত-প্রতিঘাত, নানা প্রতিবন্ধকতা এবং বৈরিতা জয় করে হাউজিং সোসাইটি এখন খ্রীষ্টান সমাজের গৃহ সমস্যা সমাধানের একটি গর্বিত ঠিকানা। সম্মানিত পরিচালনা কমিটির শ্রম, মেধা, নিষ্ঠা ও অব্যাহত কর্মময়তার ফলে সোসাইটি আজ সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার সম্পদ পরিসম্পদের মালিক।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কালবের চেয়ারম্যান ও হাউজিং সোসাইটির সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান মি. আগষ্টিন পিউরীফিকেশন। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন প্রেসিডেন্ট মি. নির্মল রোজারিও, কাক্কো লিঃ এর চেয়ারম্যান মি. পংকজ গিলবার্ট কস্তা, ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট মি. ইগ্নেসিয়াস হেমন্ত কোড়াইয়া। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন হাউজিং সোসাইটির ভাইস চেয়ারম্যান মি. ডিউক পি. রোজারিও, পরিচালক: অর্থ ও প্রশাসন মি. জেমস ডি’রোজারিও, ট্রেজারার মি. ইউজিন কোড়াইয়াসহ ব্যবস্থাপনা কমিটি, লোন কিমিটি, আভ্যন্তরীন নিরিক্ষা কমিটির সকল কর্মকর্তাবৃন্দ । এছাড়াও হাউজিং সোসাইটির সদ্য বিদায়ী ব্যবস্থাপনা কমিটির সকল সদস্য-সদস্যাবৃন্দ, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, উপদেষ্টা, সম্মানিত অতিথিবৃন্দ ও সোসাইটির সকল অফিস কর্মীবৃন্দ।

প্রতিষ্ঠানের সেক্রেটারি পেপিলন হেনরী পিউরীফিকেশনের সঞ্চালনায় ও চেয়ারম্যান আগষ্টিন প্রতাপ গমেজ এর সভাপতিত্বে তেজগাঁও হলি রোজারি চার্চের পাল পুরোহিত জয়ন্ত এস. গমেজ এর বাইবেল পাঠ ও প্রারম্ভিক প্রার্থনার মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশন করা হয় এরপরেই প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, সদ্য বিদায়ী কর্মকর্তা, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও উপদেষ্টাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা হয়। অনুষ্ঠানের কর্মসূচী অনুযায়ী সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা, সদ্যবিদায়ী চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা এবং নবনির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটির শুভ সূচনা বিষয়ে নীড় সংবাদের প্রযোজনায় একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
হাউজিং সোসাইটির বর্তমান চেয়ারম্যান মি. আগষ্টিন প্রতাপ গমেজ তাঁর বক্তব্যে আশা ব্যক্ত করে বলেন “হাউজিং সোসাইটির দীর্ঘ ইতিহাসে চেয়ারম্যান মি. আগষ্টিন পিউরীফিকশন ও তার ব্যবস্থাপনা কমিটির অবদানে সোসাইটির আয়বর্ধকমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নসহ ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম সাধিত হয়েছে। তার অসামান্য মেধা, জ্ঞান ও অক্লান্ত পরিশ্রমের অবদান শুধু আমাদের কাছে নয়, সমাজের সকল স্তরে, সকল স্থানের দলমত নির্বিশেষে মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি হাউজিং সোসাইটির দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সারাদেশের হাজারেরও বেশি সমবায় প্রতিষ্ঠান নিয়ে পরিচালিত কালবের মতো দেশের বৃহৎ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন-এটা তার মেধা, গুণ ও মানুষের ভালবাসারই ফসল। তিনি হাউজিং সোসাইটির যে আয়বর্ধকমূলক উন্নয়ন প্রকল্পগুলো রেখে গিয়েছেন আমরা তারই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এগিয়ে যাচ্ছি।

সদ্য বিদায়ী সেক্রেটারী মি. ইমানুয়েল বাপ্পি মন্ডল আশা ব্যক্ত করে বলেন, বিগত ১২ বছরে মি. আগষ্টিন পিউরীফিকেশনের নেতৃত্বে হাউজিং সোসাইটির যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তা যেন নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটি এর ধারাবহিকতা বজায় রেখে সোসাইটির উন্নয়ন আরো তরান্বিত করবে।
বিশেষ অতিথিদের বক্তব্যে কাককো লি:-এর চেয়ারম্যান মি. পংকজ গিলবার্ট কস্তা বলেন, হাউজিং সোসাইটি আজকে একটি নতুন ধারার সূচনা করেছে, “নতুন বোর্ডের প্রতি আশা করবো তারা স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসনের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করবেন,” ঢাকা ক্রেডিট এর প্রেসিডেন্ট ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া বর্তমান পরিচালনা পরিষদকে অনুরোধ করে বলেন, বিদায়ীদের পরামর্শ নিয়ে এবং সবাইকে সাথে নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তিনি প্রতিষ্ঠানটির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডেন্ট মি. নির্মল রোজারিও তাঁর বক্তব্যে নতুন এবং ভিশনারি নেতৃত্বের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি নতুন পরিচালনা পরিষদকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “নেতৃত্ব সর্বদা ভিশনারি হতে হবে, নেতৃত্বের মধ্যে স্বপ্ন থাকতে হবে এবং সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যেতে হবে।”
ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি মাইকেল জন গমেজ ঢাকা ক্রেডিটে পক্ষ থেকে উপস্থিত সকলকে প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “আগষ্টিন পিউরীপিকেশনের মধ্যে যে স্বপ্ন, স্পিরিট, উদ্যোম আছে তা কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানকে আজ পরিপূর্ণতায় রুপ দিয়েছে।”
উপদেষ্টা কর্ণেল যোসেফ অনিল রোজারিও বলেন, আমাদের সাবেক বোর্ড উন্নয়নমূলক কাজ করেছে সেটা দৃশ্যমান। তিনি সদ্য বিদায়ী ব্যবস্থাপনা কমিটিকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান, নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটিকে শুভকামনা ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানান।

অনুষ্ঠানসূচী অনুযায়ী ৪৮টি প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, বৈশাখের গান, নৃত্য, আবৃত্তি, প্রতিষ্ঠাবার্র্ষিকীর কেক কাটা, বিদায়ী বোর্ডের সদস্যদের উপহার বিতরণ করা হয়।
হাউজিং সোসাইটি সূত্রে জানা গেছে, উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটি ইতিমধ্যে নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে সোসাইটির যেসকল কার্যক্রম বন্ধ ছিল তা বর্তমান পরিষদ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সচল করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। বিশেষ করে দড়িপাড়ায় থীমপার্ক ও রেস্টুরেন্ট প্রকল্প আগামী ২ মাসের মধ্যে রেস্টুরেন্ট পূর্ণাঙ্গভাবে ও থীমপার্কের কয়েকটি রাইড নিয়ে কিছু অংশ সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। বর্তমান বোর্ড প্রতিটি আয়বর্ধকমূলক প্রকল্পসহ বিভিন্ন স্থানে ক্রয়কৃত প্লট ও জমি পরিদর্শন করে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
বর্তমান কমিটির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সোসাইটিতে সময়ানুবর্তিতার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে সদস্যদের কাক্ষিত সেবা দিতে প্রধান কার্যালয়সহ সকল সেবাকেন্দ্রে ব্যয় সংকোচনে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সদ্য বিদায়ী ব্যবস্থাপনা কমিটির উন্নয়ন কর্মকান্ড ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বর্তমান পরিষদ হাউজিং সোসাইটির কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধিকল্পে সকলের সহযোগিতায় এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

হাউজিং সোসাইটির গঠন প্রক্রিয়ায় মন্ডলীর পক্ষ থেকে অন্যতম সহায়ক শক্তি হিসেবে যিনি পাশে এসে দাঁড়ান ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের প্রয়াত পরম শ্রদ্ধেয় আর্চবিশপ মাইকেল রোজারিও। আর ব্যক্তি পর্যায়ে এই পথের পথিকৃৎ হলেন স্বর্গীয় ডানিয়েল কোড়াইয়া। তাঁর সাথে ছিলেন স্বর্গীয় আলেকজান্ডার রোজারিও সহ আরও কয়েকজন সমবায়ী ব্যক্তিত্ব। খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ভুক্ত সদস্যদের বাসোপযোগী পরিবেশে বিক্রয়যোগ্য জমি/ফ্ল্যাট/গৃহনির্মাণ করে সোসাইটির পরিকল্পনা অনুসারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদনকৃত বাসস্থান প্রস্তুত করে সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করার লক্ষ্যে ‘আমরা গৃহ সমস্যা সমাধানে অঙ্গীকারাবদ্ধ’ শ্লোগান নিয়ে ঢাকা বিভাগের মধ্যে সোসাইটির কর্ম এলাকা নির্ধারিত হয়। সোসাইটির প্রথম প্রকল্প ছিল রাজাবাজার প্রকল্প এবং মহাখালী ১নং প্রকল্পে প্রথম গৃহ নির্মাণ করেন মি. লিও মধু। সোসাইটির প্রথম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ জুন।