
'পুণ্য সপ্তাহ'
কাথলিক মণ্ডলীর উপাসনাচক্রে পুণ্য সপ্তাহ একটি বিশেষ সময়, যা প্রভু যীশু খ্রীষ্টের যাতনাভোগ, ক্রুশ মৃত্যু ও পুনরুত্থানের ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। সাধারণত উপবাসকালের ৬ষ্ঠ রবিবার অর্থাৎ তালপত্র রবিবারের পর থেকে পুণ্য সপ্তাহ শুরু হয়ে পুনরুত্থান রবিবার পর্যন্ত এক সপ্তাহকে সাধারণত উপসনাচক্রে "পুণ্য সপ্তাহ" বলা হয়।

তালপত্র রবিবার
তালপত্র রবিবারের উপাসনায় মূলত জেরুসালেম নগরে যীশুর রাজশিক প্রত্যাবর্তন করার ঘটনাকে স্মরণ করা হয়ে থাকে।
ট্রিডিউম বা নিস্তার দিবসত্রয়
তপস্যাকালের পুণ্য উপাসনায় পুণ্য সপ্তাহের পুণ্য বৃহস্পতিবার, পুণ্য শুক্রবার ও পুণ্য শনিবারকে নিস্তার দিবসত্রয় বা ট্রিডিউম বলা হয়। এ দিনগুলোকে মানব মুক্তির ইতিহাসে কাথলিক মণ্ডলীর পুণ্য উপসনার গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এটি হল আমাদের বিশ্বাসের কেন্দ্রীয় রহস্য উদযাপনের গৌরবান্বিত মুহূত।

পুণ্য বৃহস্পতিবারের পুণ্য উপাসনার গুরুত্ব
নিস্তার দিবসত্রয়ের পুণ্য বৃহস্পতিবারের পুণ্য উপাসনায় যীশুর শেষ ভোজের স্মরণে শিষ্যদের পা ধোঁয়ার অনুষ্ঠান, পবিত্র খ্রীষ্টপ্রসাদ প্রতিষ্ঠার স্মরণানুষ্ঠান এবং যাজকবরণ সংস্কার স্থাপনের ঘটনাকে স্মরণ করা হয়। এ দিনেই যীশুকে তাঁর শিষ্য যুদাস ইস্কারিয়ৎ শত্রুদের হাতে সমর্পণ করেন। এ দিনে সান্ধ্য খ্রীষ্টযাগের পর পবিত্র খ্রীষ্টপ্রসাদে যীশুর আরাধনা করা হয়। পবিত্র খ্রীষ্টপ্রসাদ সাক্রামেন্ত পবিত্র সিন্ধুক থেকে সরিয়ে সুনির্দিষ্ট স্থানে মূলত গেৎসিমানী বাগানের আবেশে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করা হয়ে থাকে। এ সময় গির্জাঘরের পুন্য বেদিতে কোন কাপড় বা সাজ থাকে না।

পূণ্য শুক্রবারের উপাসনার গুরুত্ব
উত্তর: নিস্তার দিবস ত্রয়ের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ পুণ্য শুক্রবারের উপসাসনায় যীশুর যাতনাভোগ, ক্রুশ বহন ও ক্রুশে নির্মম মৃত্যুবরণের ঘটনাকে স্মরণ করা হয়। এ দিনে যীশু মৃত্যুবরণ করেছেন বলে, এদিন কোন খ্রীষ্টযাগ অনুষ্ঠিত হয় না। যীশুর ক্রুশ মৃত্যুর কথা স্মরণ করে ক্রুশের প্রতি ভক্তি প্রদর্শনার্থে এ দিনের পুণ্য উপাসনায় যীশুর যাতনাভোগের স্মরণানুষ্ঠান, বাণী পাঠ (মঙ্গলসমাচার থেকে যাতনাভোগের ঘটনা পাঠ), ক্রুশ চুম্বন এবং শেষে বিগত দিনের সংরক্ষিত পবিত্র খ্রীষ্টপ্রসাদ খ্রীষ্ট ভক্তদের কাছে বিতরণ করা হয়। এ দিনের পুণ্য উপাসনায় যীশুর মৃত্যু স্মরণে ও তাঁর শুন্যতায় কোন ঘন্টা বাজানো হয় না।

পুণ্য শনিবারের পুণ্য উপাসনার গুরুত্ব কি
নিস্তার দিবসত্রয়ের তৃতীয় দিন, অর্থাৎ পুণ্য শনিবার দিন হলো পুণ্য উপাসনার চূড়ান্ত দিন। এ দিনে মধ্য রাত্রির পুণ্য উপাসনার মধ্য দিয়ে যীশুর পুনরুত্থান উৎসব উদযাপন করা শুরু হয়। এ দিনের পুণ্য উপাসনায় ঈশ্বরের সৃষ্টির ঘটনা (আদিপুস্তক) থেকে শুরু করে ঈশ্বরের মনোনীত জাতি ইস্রায়েলীয়দের মিশর দেশ থেকে প্রতিশ্রুত দেশে যাত্রা, ঈশ্বরের মানব মুক্তির পরিকল্পনা ও তাঁর একমাত্র পুত্রকে প্রেরণের প্রতিশ্রুতি, ঈশ্বরের নতুন মনোনীত জাতি এবং যীশুর মৃত্যু ও তৃতীয় দিনে তাঁর পুনরুত্থানের মধ্য দিয়ে মানব মুক্তির পূর্ণ ইতিহাস তুলে ধরে। এ দিনের পুণ্য উপাসনায় আগুন আশীর্বাদ, পুনরুত্থান প্রদীপ প্রজ্বলন, দীক্ষা ও সাধারণ জল আশীর্বাদ, দীক্ষাস্নান সংকল্প নবায়ন অনুষ্ঠিত হয়। এ দিনের উপাসনায় 'জয়পরমেশ্বর' গানের সময় যীশুর পুনরুত্থান স্মরণে ঘন্টাধ্বনি, পুণ্য বেদীতে পুনরুত্থখান প্রদীপ থেকে প্রদীপ প্রজ্বলন ও ধূপারতি প্রদান করার মধ্য দিয়ে যীশুর পুনরুত্থান এবং মানব জাতির মুক্তির আনন্দ ঘোষণা করা হয়।

হে মানব মুক্তিদাতা যীশু, তোমার যাতনাভোগ, ক্রুশবহন, যন্ত্রণাময় ক্রুশীয় মৃত্যু ও পুনরুত্থানের মধ্য দিয়ে আমার মুক্তি সাধন কর ও আমার সকল পাপ থেকে উদ্ধার কর। আমেন।
তথ্য: কাথলিক মন্ডলীর শিক্ষা পুস্তক, উইকিপিডিয়া