গত ২৩ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, জাপানের রাজধানী টোকিও শহরে ন্যাশনাল অলিম্পিক মেমোরিয়াল ইযুথ সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় এশিয়া মহাদেশের সিগনিস সদস্যভুক্ত সদস্যদের নিয়ে বার্ষিক সমাবেশ।
এই বছর সিগনিস এশিয়া সমাবেশের মূলসুর ছিল “শান্তির সংস্কৃতি গঠনের জন্য ডিজিটাল বিশ্বে মানব যোগাযোগ”। এতে এশিয়া মহাদেশের ১২টি দেশের প্রায় ৭০জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
সমাবেশে বিভিন্ন বক্ততাদের আলোচনার মধ্যদিয়ে শান্তির সংস্কৃতি তৈরীতে ডিজিটাল মিডিয়া পরিচালনা করার ক্ষেত্রে আরও দায়িত্বশীল, নৈতিক এবং সতর্ক হওয়ার বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা করা হয়।
যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করার মধ্য দিয়ে সম্প্রীতি ও এক শান্তিময় বিশ্ব গঠনের সভায় আরো জুড়ালোভাবে আহ্বান করা হয়। একই সাথে ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের মধ্য দিয়ে মানব সংযোগের শক্তির মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সম্মিলিতভাবে অবদান রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।
ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহারে মানুষ যেন আসক্ত হয়ে না পরে এবং মানুষ থেকে মানুষকে বিচ্ছিন্ন না করে সেই দিকে খেয়াল রাখার জন্য সর্তক্য থাকতে বলা হয়। সেই সাথে বাস্তবতার সাথে সংগতি রেখে আন্তঃব্যক্তিক সম্পকর্কে বিকাশিত করার সুযোগ সৃষ্টি করার পরামর্শ দেওয়া হয়। মানুষের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে এবং শান্তির সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য যোগাযোগের উপর আরও বেশি মনোযোগ দেওয়র জন্য একটি পদক্ষেপের আহ্বান জানায়।
জেজুইট ফাদার অরুণ তার সহভাগিতায় বলেন, “ডিজিটাল বিপ্লব মানব জীবনকে আমূল পরিবর্তন করছে। আজকের বিশ্বে, ডিজিটাল প্রযুক্তির আবির্ভাবে মানুষের যোগাযোগ গভীরভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে যা আমাদেরকে পরিবর্তনশীল সময়ের সাথে পরিবর্তনের আহ্বান জানায়।”
দক্ষিণ কোরিয়ার বিশপ লিও, পোপ ফ্রান্সিসের উদ্ধৃত্তি দিয়ে বলেন, “যোগাযোগ প্রত্যেক মানুষের মধ্যে একটি গভীর সংবেদনশীলতা জাগ্রত করে। যেখানে অন্যের আনন্দ এবং যন্ত্রণাগুলি আমাদের নিজস্ব হয়ে ওঠে। কারণ, আমরা সকলে একই বিশ্বপল্লীর মানুষ। তবুও অনেকক্ষেত্রে আমরা এক হতে পারছি না। পোপ ফ্রান্সিস যাকে “উদাসীনতার বিশ্বায়ন” বলে অভিহিত করেছেন। সেটিকে অবশ্যই মোকাবেলা করতে হবে এবং ‘ভ্রাতৃত্বের দায়িত্ব’ পালন করতে হবে।”
“আমাদের বর্তমান এবং আগামী দিনের বিশ্বে ডিজিটাল যুগের অবিশ্বাস্য সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সাহায্য করতে হবে। সেই সাথে এই পৃথিবীতে ঈশ্বরের রাজ্য এবং তাঁর ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় হৃদয়ের প্রজ্ঞা দিয়ে অবদান রাখতে চেষ্ঠা করতে হবে”, বলেন বিশপ লিও।
পোপ ফ্রান্সিস কৃত্রিম বুদ্ধিমুত্তার (এআই) যুগে “সম্পূর্ণরূপে মানবিক যোগাযোগ অর্জনের জন্য মানুষের হৃদয় থেকে কাজ শুরু করে নিজেদের মধ্যে প্রজ্ঞা গড়ে তোলার আহ্বান জানান।”
তিনি আরো বলেন, “যখন আমরা আমাদের সময়কে বুদ্ধিমানের মত ব্যবহার করি এবং আমাদের দুর্বলতাকে আলিঙ্গন করি” তখনই সেই প্রজ্ঞা, জীবনে ‘স্বাদ’ যোগ করে এবং আমরা হয়ে উঠি পরিপক্ক মানুষ।”
আমরা আমাদের জীবনে আধ্যাত্মিক, নৈতিক, শিক্ষাগত এবং সামাজিক জীবনে নতুন প্রযুক্তিকে একীভূত করার প্রয়োজনীয়তা হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে হবে। কেননা, মানুষের আবেগ ও আধ্যাত্মিকতার অনুশীলন একে অপরের সাথে সংযোগ স্থাপনের ক্ষমতা বিশ্বে শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
বর্তমান জগতে শান্তির সংস্কৃতি গঠনের জন্য ডিজিটাল বিশ্বে মানব যোগাযোগ সময়ের দাবি। তাই, শান্তি স্থাপনের প্রক্রিয়ায় বর্তমান তরুণ সমাজের সাথে কাজ করার চেতনা আমাদের অন্তরে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে।
রিপোর্টার : ফাদার বাবলু কোড়াইয়া
সৌজন্যে : বরেন্দ্রদূত