কালের বিবর্তনে বিলীন হয়েছে চিঠির ব্যবহার। এক সময় চিঠি ছিল মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছানোর একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু স্মার্টফোনের যুগে চিঠি যেন কালের পরিক্রমায় হারিয়েছে তার জৌলুশ
।
এখন আর মানুষকে যেতে হয়না আগের মতো পোস্ট অফিসে। অপেক্ষা করতে হয়না মাসের পর মাস একটা চিঠির উত্তরের জন্য। দেখা যায় না গ্রামে গ্রামে ডাকপিয়নকে।
ডাকপিয়নের সাইকেলের বেলের কিরিং কিরিং শব্দ যেন বেঁজে উঠে এখনো আমার কর্ণকুহরে। প্রেমিক-প্রেমিকারাও আর লেখে না চিঠি। তাদের মনের আবেগ, ভালোবাসা এখন প্রকাশ পায় মেসেঞ্জারের চ্যাটবক্সে।
মোবাইল ফোন আসার আগে সর্বত্রই চিঠির ব্যবহার ছিল। চিঠির সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, ভালোবাসা নানারকম স্মৃতিকাতর বিষয়। আজকাল দাপ্তরিক কাজ ছাড়া চিঠির ব্যবহার নেই বললেই চলে।
চিঠির মাধ্যমে মনের মাধুরী মিশিয়ে প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসার কথা তুলে ধরা হতো। বাহারি রঙের কাগজে প্রেমিকা সাজাতেন সেসব কথামালা।
বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছিলেন, ‘লাঠি তোমার দিন গিয়াছে।’ হ্যাঁ, লাঠির দিন তো বহুকাল আগেই গিয়েছে। সেই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেক কিছুই হয়তো চলে গেছে। চিঠি এখন হয়ে উঠেছে ‘টেক্সট’।
তাই বঙ্কিমচন্দ্রের কথা ধার করেই বলা যায়, চিঠি তোমারও দিন গিয়েছে! শুধু দূরে থাকা মানুষের জন্যেই যে চিঠি লেখা হতো তা কিন্তু নয়। প্রতিদিন দেখা হওয়া প্রিয় মানুষটির জন্য চিঠি লিখতেন অনেকে।
কারণ চিঠির মাধ্যমে না বলা কথাগুলো গুছিয়ে বলা যেত খুব সহজে, যা হয়তো মুখে বলা অসম্ভাবনীয় ছিল। আমার জীবনের একটা গল্প শুনাই আপনাদের, সময়টা ছিল ২০০৮-২০০৯ সাল তখনো প্রাইমারির গণ্ডি পার করিনি।
সেসময় গুটি কয়েক মানুষ ছাড়া ছিল না হাতে হাতে মোবাইল ফোন। বলা যায় তখনি টুকটাক চিঠি লেখা হতো। আমিও একটা চিঠি লিখেছিলাম আমার হারিয়ে যাওয়া সেই প্রেয়সীর কাছে। সেই চিঠিময় সময় এখনো হাতড়ে বেড়াই।
বিজ্ঞানের যুগে হাতে মোবাইল ফোন যেখানে সোশ্যাল মিডিয়ায় মুহূর্তে পৌঁছে যাচ্ছে দেশ বিদেশের খবরা-খবর। তাহলে কে বা করবে এই চিঠির ব্যবহার। সারাবিশ্ব আজ মানুষের হাতের মুঠোয়।
ইন্টারনেট, ফেসবুক,ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউবের মাধ্যমে মুহূর্তেই দেশ বিদেশের নানা রকমের খবর পাচ্ছে মানুষ।
তবে আজ অর্থাৎ, ১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক চিঠি দিবসে চিঠি লিখতে পারেন। লাল, নীল পাতায় বাহারি রঙে মনের না বলা কথা জানিয়ে রঙিন খামে চিঠি লিখতে পারেন। যার শুরুতে প্রিয় ও শেষে থাকবে ইতি তোমারই।
আসুন সবাই শুধু প্রিয় মানুষ নয়, মা-বাবা, ভাই-বোনদের হারিয়ে যাওয়া বন্ধুবান্ধব যেমন কোনো এক সময় সম্পর্কের যোজন বিয়োজন হয়েছে চিঠির মাধ্যমে প্রকাশ করি তাকে কতোটা ভালোবাসি ইত্যাদি বিষয়াদি।
প্রেয়সীর মুখের হাসি যেন মুগ্ধ ঝরা তার চুল যেন আপনাকে করে পাগলপাড়া। এসব বিষয় তুলে ধরতো চিঠির মাধ্যমে।আগে সরকারি চাকরির খবর আসতো চিঠির মাধ্যমে। বাড়িতে দেখা যেত চিঠি বাক্স এসব যেন এখন জুড়ি মেলাভার।
তবে বহুদিন সংসার জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন যাদের মধ্যে এখন কোনো রোমান্টিকতা কাজ করে না, তারাও এই দিনে আবেগ, অনুভূতি দু'জন দু'জনার প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা মমতায় ভরা লাল, নীল, বেগুনি, রঙের কাগজে লেখতে পারেন অজানা ভালোবাসার কথা চিঠির মাধ্যমে।