‘পারফেক্ট’ শব্দটি আর যা-ই হোক, দাম্পত্য জীবনের জন্য নয়। আপনি ইনস্টাগ্রামে যত দম্পতির ছবি দেখেন, রিলসে যত হাসিখুশি ভিডিও দেখেন; বিশ্বাস করুন, তাঁদের কারও দাম্পত্য সম্পর্কই ‘পারফেক্ট’ নয়। অনেক ক্ষেত্রেই সত্যিটা হলো, তাঁদের চেয়ে আপনার দাম্পত্য জীবনের জটিলতাই বরং কম। বীজগণিতের মতো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের গ্রাফও ওঠানামা করে, আর এটাই স্বাভাবিক। একটি নির্দিষ্ট মাত্রার ভেতর সম্পর্কে মনোমালিন্য ‘স্বাস্থ্যকর’ বলে রায় দিয়েছেন সম্পর্ক–বিশেষজ্ঞরা। জেনে নেওয়া যাক, দাম্পত্য জীবনের প্রধান কয়েকটি শত্রুর কথা, যেগুলো থেকে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে।
১. তুলনা
‘তুলনা’ দাম্পত্য জীবনের অন্যতম বড় শত্রু। প্রত্যেকটি মানুষ আলাদা। আর সবার আগে আপনার সঙ্গীর স্বাতন্ত্র্যকে স্বীকার করে নিতে হবে। আপনি যদি অন্যের সঙ্গে সঙ্গীর তুলনা করেন, তাহলে সেই ‘অন্য’কেই বিয়ে করতেন! যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিয়েবিষয়ক ওয়েবসাইট ম্যারেজ ডটকমের সম্পর্ক–বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে অন্যের সঙ্গে তুলনা করাকে মানসিক নির্যাতন হিসেবে ঘোষণা করেছেন। অন্যের সঙ্গে তুলনা আপনার সম্পর্ককে একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতার দিকে ঠেলে দেয়। দিন শেষে সম্পর্কটা হয়ে ওঠে বিষাক্ত। তাই ভুলেও নিজেদের সম্পর্ক বা দাম্পত্য সঙ্গীকে অন্য কারও সঙ্গে তুলনা করবেন না।
২. প্রতিটি ঝগড়ায় জিততে চাওয়ার প্রবণতা
‘পারফেক্ট’ দাম্পত্য সম্পর্ক বলে যেমন কিছু নেই, দাম্পত্য সম্পর্কে ‘ফিফটি ফিফটি’ বলেও কিছু হয় না। কিছু ক্ষেত্রে আপনি বেশি ছাড় দেবেন, কিছু ক্ষেত্রে আরেকজন; এভাবেই এগিয়ে যায় সম্পর্ক। ঝগড়ার ক্ষেত্রেও তা–ই। কেউ একজন দুটো কথা বেশি বলে ফেলে বা বেশি উত্তেজিত হয়ে যায়। আপনি-ই নাহয় সে ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা রাখুন। প্রতিবার ঝগড়ায় জিততে গিয়ে দাম্পত্য সম্পর্ককেই হারিয়ে ফেললেন, তা যেন না হয়। ‘ব্লেম গেম’-ই যদি খেলতে চান, তাহলে দাম্পত্য সম্পর্কের জন্য আপনি এখনো তৈরি নন। কে দোষী, কার কত বড় সমস্যা, সেদিক থেকে মনোযোগ সরিয়ে দুজনেই সমস্যা সমাধানে আন্তরিক হোন।
৩. সম্পর্কে তৃতীয় পক্ষের প্রভাব
দাম্পত্য সম্পর্ককে তৃতীয় পক্ষের প্রভাবমুক্ত রাখতেই হবে। নিজেদের দাম্পত্য সম্পর্কের সমাধান অন্য কোথাও খুঁজতে যাওয়া চরম বোকামি। সঙ্গীকে সম্মান করুন, দাম্পত্যের সংকট পেরিয়ে তাঁকে মন থেকে ক্ষমা করুন। প্রতিনিয়ত সম্পর্কে এমন অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির তৈরি হয়, যেখানে কখনো আপনার দায় বেশি থাকে, কখনো অপর পক্ষের। সারা জীবনের দাম্পত্য সম্পর্কে প্রতিনিয়ত তিক্ততা ভুলে একজন আরেকজনকে ক্ষমা করুন। দাম্পত্য সম্পর্কে তৃতীয় পক্ষকে যত গুরুত্ব দেবেন, আপনাদের ভেতরকার জটিলতা ততই ঘনীভূত হবে। দাম্পত্য সম্পর্কের একেকটা নতুন মোড় থেকে নতুনভাবে শুরু করুন। তাতে একে অপরের সঙ্গে বোঝাপড়াও বাড়ে, আবার সম্পর্কটাও মজবুত হয়। কখনো সঙ্গীকে নিয়ে অন্যের কাছে ‘বিচার’ দিয়ে তাঁকে ছোট করবেন না। তাতে আদতে কিন্তু আপনিই ছোট হবেন। নিজেদের ভেতরকার জটিলতা কেবলই বাড়বে।
৪. যে নীরবতা একসময় ‘অগ্নেয়াগিরি’তে রূপ নেয়
সঙ্গীর নানা বিষয়ে আপনার দ্বিমত থাকতে পারে। এমন অনেক ছোট ছোট বিষয় আছে, যেগুলো হয়তো একসঙ্গে বসে আলাপের মাধ্যমে সমাধান করা যেত। তবে আপনি সেগুলো নিয়ে কথা না বাড়ানোটাই সমীচীন মনে করলেন। অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের নীরবতা একসময় ‘আগ্নেয়গিরি’তে রূপ নেয়। অনেক কথা জমতে জমতে সেগুলো এমন দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি করে যে সেখান থেকে বের হয়ে স্বাভাবিক সম্পর্কে ফেরা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই অভিমানের জমতে থাকা বরফ বিপৎসীমা পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই খোলামেলা আলাপ-আলোচনা, বোঝাপড়ার মাধ্যমে গলিয়ে ফেলুন।
৫. যে ফোন আপনার সঙ্গীর চেয়েও আপনার কাছে বেশি গুরুত্ব পায়
আপনার ফোন যদি সঙ্গীর চেয়েও আপনার কাছে বেশি গুরুত্ব পায়, তাহলে আপনি ভুল করছেন। সঙ্গীর সঙ্গে, নিজের দাম্পত্য জীবনের সঙ্গে অন্যায় করছেন। এই ভুলকে প্রশ্রয় দিলে দূরত্ব বাড়তে বাড়তে একসময় দাম্পত্য জীবনের স্বাভাবিক ছন্দটাই নষ্ট হয়ে যাবে। সেই জীবন্মৃত দাম্পত্য সম্পর্কে অবশিষ্ট থাকবে কেবল একসঙ্গে বেঁচে থাকার অভ্যাস। ফোনের বদলে ল্যাপটপ, ট্যাব, গেম খেলা বা টেলিভিশনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য!