মার্ক লিওনার্ড
মার্কিন নির্বাচনের মাত্র দুই মাস বাকি। ইউরোপীয় নেতাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা যে ট্রাম্প জিতে গেলে কী হবে? ট্রাম্পের সঙ্গে ফিরে আসবে নতুন বাণিজ্যযুদ্ধ, ইউক্রেনকে পরিত্যাগ করা, এমনকি ন্যাটো ছেড়ে যাওয়ার মতো ভীতিকর ব্যাপার? তবে এখন মনে হয় তাঁরা একটা ভুলে যাওয়া অনুভূতি ফিরে পাচ্ছেন, যার নাম আশা। ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ডেমোক্র্যাটদের প্রধান প্রার্থী হয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী হিসাব-নিকাশে আর এগিয়ে নেই। এই পরিবর্তনের ফলে ইউরোপীয়রা এখন আরও ভালো কোনো বিকল্প ভবিষ্যতের কথা ভাবতে পারছে। তবু কমলা হ্যারিস জিতলেও সবকিছু জো বাইডেনের প্রশাসনের মতোই চলবে, এমন ভাবাটা হবে বোকামি। বাস্তবতা হলো, যা আসছে, তার জন্য ইউরোপ প্রস্তুত নয়।
কমলা প্রশাসন সম্ভবত ইউক্রেনে মার্কিন সহায়তা প্রত্যাহারের মতো সিদ্ধান্ত নেবে না। কিন্তু যুদ্ধ যতই বাড়ছে, মার্কিন কর্মকর্তারা ইউক্রেনের বর্তমান অচলাবস্থা ভাঙার ব্যাপারে আস্থা হারিয়ে ফেলছেন।
রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেন আক্রমণ করছে। কিন্তু ২০২২ সালে তারা যে অঞ্চল হারিয়েছে, তা পুনরুদ্ধার করা দিন দিন আরও অসম্ভব হয়ে উঠছে।
পরিস্থিতি যে ভালো নয়, তা ইউক্রেনীয়রা জানে। তাই তারা অচলাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজছে। ব্যক্তিগতভাবে ইউক্রেনের নেতারা হয়তো আশা করছেন যে যুক্তরাষ্ট্র তাঁদের আলোচনার টেবিলে ঠেলে দেবে। তাহলে পথ পরিবর্তনের জন্য একটা রাজনৈতিক আড়াল পাওয়া যেবে। ওয়াশিংটনে এমন আলোচনা ইতিমধ্যে চলছে। যে ইউরোপীয়রা এখনো ‘যত দিন সময় লাগে’ ইউক্রেনকে সমর্থন করার কথা বলছেন, তাঁদের জন্য এটা হবে এক বড় ধাক্কা। যা-ই ঘটুক না কেন, ইউরোপীয়দের জন্য চ্যালেঞ্জ হলো রাশিয়ার শর্তে যুদ্ধে ‘শান্তি’ প্রতিহত করা।
বাণিজ্যনীতি হবে আরেকটি প্রধান বিষয়। ট্রাম্প সব আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক এবং চীন থেকে আসা পণ্যের ওপর অন্তত ৬০ শতাংশ নতুন শুল্ক আরোপের কথা বলছেন। সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের দেওয়া বিধিনিষেধ তো থাকছেই। চীনের পণ্যের ওপর বহাল মার্কিন শুল্ক এবং ট্রাম্প প্রশাসনের নিজস্ব শুল্ক প্রয়োগের চাপে ইউরোপের অবস্থা হবে খুব কঠিন। কমলার চীন নীতি বাইডেনের চেয়ে নরম হবে না। যুক্তরাষ্ট্রে চীনবিরোধী ঐকমত্য বেশ দৃঢ়। কয়েকটি প্রকাশ্য বিবৃতিতে কমলা তাইওয়ানের পক্ষে জোরালো সমর্থন জানিয়েছেন। বলেছেন, চীন মার্কিন অর্থনীতিতে নিম্নমানের পণ্য খালাস করছে।
বাইডেন ছিলেন আটলান্টিক অঞ্চলের পক্ষে আপসহীন। কমলা তা নন। কমলার মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির ঝোঁক ইউরোপ থেকে এশিয়ার দিকে সরে যাবে বলে মনে হয়। ইউরোপীয়রা যখন প্রতিরক্ষায় আরও বিনিয়োগের কথা বলে, তখন তাদের নিজেদের জিজ্ঞাসা করা উচিত যে তারা কি শুধু ট্রাম্পকে শান্ত করার চেষ্টা করছে, নাকি নিজেদের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে? প্রেসিডেন্ট যিনিই হোন, ইউরোপীয়দের আতঙ্কিত না হয়ে তাদের বড় ভয় মোকাবিলা করতে প্রস্তুত হতে হবে। সেই ভয় হলো ইউক্রেন ও চীন নিয়ে। তা না হলে বিভিন্ন দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
ছোট সদস্যরাষ্ট্রগুলো সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলো চালু রাখবে না। বড় দেশগুলোর দায়িত্ব হবে তখন ছোট দেশগুলোকে শান্ত করা।
সেই হিসাবে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠন পুরো পটভূমি বদলে দিতে পারে। যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্য ভূ-অর্থনৈতিক বিষয়গুলোয় ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে, তবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের তুলনায় নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের স্বাধীনতা থাকবে বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের জায়গা নিতে পারবে না যুক্তরাজ্য। তবে ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা এবং প্রযুক্তিকাঠামোয় যুক্তরাজ্য আবার যুক্ত হলে তা মহাদেশের কৌশলগত অবস্থানকে উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী করবে। পোল্যান্ড, বাল্টিক ও নর্ডিক দেশগুলো এমন পরিস্থিতিতে সম্ভবত নেতৃত্ব দেবে। তবে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা আছে। তিনি কি যুক্তরাজ্যকে ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি এবং পরিবেশ উদ্যোগে যুক্ত করবেন? নাকি যুক্তরাজ্যকে পাশে সরিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে দুর্বল করে দেবেন? তবে একটা বিষয় পরিষ্কার। পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনিই হন, ইউরোপকে পরিবর্তনের পরিকল্পনা শুরু করে দিতে হবে।
কার্টেসিঃ প্রথম আলো